বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ হলেও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রযুক্তিবিশ্বে নিজেদের স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে ভার্চুয়াল শিক্ষক হিসেবে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন রাগিব হাসান এবং সালমান আমিন খান। ডিজিটাল শিল্পী হিসেবে অস্কার জয় করেছেন নাফিস বিন যাফর ও নাশিত জামান। সৌরশক্তির সাহায্যে হেলিকপ্টার চালনার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে বিশ্ব ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন ড. হাসান শহীদ। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন বাংলাদেশি এসব প্রযুক্তি নায়কেরা।
রা গি ব হা সা ন
রাগিব হাসান। বাড়ি জামালপুরে, তবে জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। তিনি কর্মজীবনে একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী। পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা-শ্যাম্পেইনে। পিএইএচডি করেছেন কম্পিউটার নিরাপত্তা বিষয়ে, UAB SECRETLab-এ। এখন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। সব ছাপিয়ে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় 'ই-শিক্ষক' হিসেবে। ভাষা আর দেশ এই দুই নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র থেকেই প্রযুক্তি-দুনিয়ায় বাতিঘর হয়ে কাজ করছেন মো. শামসুল হুদা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মা রেবেকা সুলতানার এই প্রিয় ছেলে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় চতুর্থ এবং উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতকে প্রথম স্থান অধিকার করায় পেয়েছেন বুয়েটের চ্যান্সেলর পুরস্কার এবং সিএসই বিভাগের স্বর্ণপদক। ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ে পিএইচডি করার সময় গ্রীষ্মকালীন শিক্ষানবিশির অংশ হিসেবে কাজ করেছেন গুগলে। একই সময়ে (২০০৪ সাল) যুক্ত হন বাংলা উইকিপিডিয়া সমৃদ্ধ করার কাজে। ২০০৫ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে উইকিপিডিয়ার প্রশাসক হন তিনি। আর ২০১২ সালের আগস্টে অনলাইনে বাংলাভাষার প্রথম স্কুল গড়ে তোলেন রাগিব হাসান। নাম দেন শিক্ষক ডটকম (www.shikkhok.com)। এর কিছুদিন আগে তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞান শেখানোর জন্য আরেকটি ওয়েবসাইট যন্ত্রগণক ডটকম প্রতিষ্ঠা করেন। তবে কেবল প্রযুক্তি নয়, বাংলা ভাষায় নানা বিষয়ে অনলাইনে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে কোর্সভিত্তিক শিক্ষাদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষক ডটকম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় এমন উদ্যোগের জন্য ইতিমধ্যেই ২০১৩ সালে গুগলের 'রাইজ' এবং ইনফরমেশন সোসাইটি ইনোভেশন ফান্ড পুরস্কার পেয়েছেন রাগিব হাসান। বাংলাভাষার মুক্ত অনলাইন স্কুল শিক্ষক ডটকমের রাগীব হাসান জানান, গত ৭ এপ্রিল ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখতম লেকচারটি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে শিক্ষক ডটকম। তাদের পঞ্চাশটিরও বেশি কোর্সের নানা লেকচার প্রতিদিন প্রায় ৪/৫ হাজার শিক্ষার্থী দেখে থাকেন। পারিবারিক জীবনে রাগীব হাসানের স্ত্রী জারিয়া আফরিন চৌধুরী একজন চিকিত্সক আর একমাত্র সন্তান যায়ানের বয়স তিন বছর।
সা ল মা ন খা ন
সালমান আমিন খান। একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন প্রকৌশলী এবং 'খান একাডেমি'র (www.khanacademy.org) প্রতিষ্ঠাতা। জন্ম ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্স শহরে। অবশ্য তার বাবা ফখরুল আমিন খান বেড়ে উঠেছেন বরিশালে। আর দাদা আব্দুল ওয়াহাব ছিলেন ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার। ২০১২ সালে মার্কিন পত্রিকা টাইমসের জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তিত্বের বার্ষিক তালিকার একজন এই সালমান খান গণিত ও বিজ্ঞানের ওপর ৩,০০০-এর অধিক ভিডিও তৈরি করেছেন। আর এই ভিডিও টিউটোরিয়াল দিয়েই তিনি মাত করেছেন বিশ্ব। ২০০৬ সালের ১৬ নভেম্বর খান একাডেমি নামে অ্যাকাউন্ট খুলে চালু করেন ই-শিক্ষার নতুন অধ্যায়।
এর শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালে, সালমান নিউ অরলিন্সে থাকা তার কাজিন নাদিয়াকে টেলিফোন আর ইন্টারনেটে অঙ্ক বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। ধীরে ধীরে অন্য কাজিনরাও তার কাছে পড়তে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তাদের সুবিধার জন্য কয়েকটি ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে তুলে দেন সালমান। ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের ছোট ভাইবোনদের পড়ালেখায় সাহায্য করার সেই ব্যক্তিগত উদ্যোগ, নিজের বানানো কয়েকটি ভিডিও সংকলন ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে তিন হাজারের অধিক ভিডিওর এক জীবন্ত লাইব্রেরিতে। লাখো মানুষ প্রতি মাসে এখান থেকে শিখে নিচ্ছেন গণিত, ভূগোল কিংবা জেনেটিকসের মতো কঠিন বিষয়। এখানে রয়েছে ইতিহাস, ব্যাংকিং, পদার্থবিজ্ঞানসহ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, ভেনচার ক্যাপিটাল, ক্রেডিট ক্রাইসিসের মতো নানা বিষয়ে অসংখ্য ভিডিও। প্রচলিত ক্লাসরুমের ধারণাকে বদলে দিয়ে এই ভিডিও টিউটোরিয়াল দিয়ে নতুন শিক্ষাপদ্ধতি চালু করেছে সালমান খানের খান একাডেমি। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে গণিত এবং তড়িত্ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান—এ দুই বিষয়ের ওপর স্নাতক এবং তড়িত্ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের ওপর স্নাতকোত্তর শেষ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা সালমান এমআইটির ইতিহাসে কনিষ্ঠতম সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বিশ্বের সামনে নতুন শিক্ষাদান পদ্ধতির রূপরেখা দেখান ২০১২ সালের জুনে। স্ত্রী উমাইমা মার্ভিকে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউতে বসে আগামীর প্রযুক্তি দুনিয়া গড়তে কাজ করছেন এই বাংলাদেশি মার্কিন।
না ফি স বি ন যা ফ র
প্রথম অস্কার জয়ী বাংলাদেশি ডিজিটাল শিল্পী নাফিস বিন যাফর। লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক বিশ্বখ্যাত স্পেশাল ইফেক্টস ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান 'ড্রিম ওয়ার্কস অ্যানিমেশন'-এ কাজ করছেন প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে। স্থায়ীও হয়েছেন এখানেই। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই সফটওয়্যার প্রকৌশলীর জন্ম ৮ অক্টোবর ১৯৭৮ সালে ঢাকার বিক্রমপুরের টঙ্গিবাড়ী থানার রামপারা গ্রামে। বেড়ে উঠেছেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। শৈশবে ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হন নাফিস। দেশে থাকা অবস্থায় স্ট্যান্ডার্ড সিক্স পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। বাবার এমবিএ পড়ার সুবাদে ১১ বছর বয়সে ১৯৮৯ সালে সপরিবারে আমেরিকার সাউথ ক্যারোলিনার চার্লসটনে পাড়ি জমান। সেখানে কলেজ অব চার্লসটন থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। 'পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান :অ্যাট ওয়ার্ল্ডস এন্ড' মুভিতে ফ্লুইড অ্যানিমেশনের জন্য ২০০৭ সালে সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল বিভাগে বিশ্ব চলচ্চিত্রের নোবেলখ্যাত অস্কার (একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস) জেতেন তিনি। ডিজিটাল ফ্লুইড ইফেক্টস সিম্যুলেশন সিস্টেমের এই কাজে হাতে খড়ি হয় ২০০০ সাল থেকে। বর্তমানে 'ড্রিম ওয়ার্কস'-এ মূলত ফিচার অ্যানিমেশনে কাজ করছেন নাফিস। অ্যানিমেশনের পাশাপাশি সফটওয়্যার ডেভেলপের কাজও করছেন। জানিয়েছেন, সর্বশেষ গতবছর মুক্তি পেয়েছে টার্বো এবং দ্য ক্রুডস। কিছুদিনের মধ্যেই আসছে মিস্টার পিবাডি অ্যান্ড শার্ম্যান এবং ব্লকবাস্টার মুভি হাউ টু ট্রেইন ইয়োর ড্রাগনের সিক্যুয়াল।
না শি ত জা মা ন
নাশিত জামান। প্রথম নারী বাংলাদেশি অস্কার বিজয়ী শিল্পী। অ্যানিমেটেড ছবি 'ফ্রোজেন'-এর নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত থেকে চলতি বছরের ২ মার্চ বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এর আগেও অস্কারজয়ী 'লাইফ অব পাই' চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণী। ওয়াল্ট ডিজনিতে কর্মরত নাশিতের বাবার বাড়ি কক্সবাজার। নাশিত জামানের জন্ম ১৯৮২ সালের ২৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়ো রাজ্যের কলম্বাসে। প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশি-আমেরিকান। আর সে কারণে কিছু সুবিধাও পেয়েছেন নাশিত। দুটো ভাষা ও সাংস্কৃতিক দক্ষতা অর্জনের সুবিধা অন্যতম। বাবা-মা দুজনই মেয়েকে ডাক্তার হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করতে তাকে উত্সাহ জুগিয়েছেন গণিতের শিক্ষকরা। আর ইংরেজির শিক্ষকরা চাইতেন, নাশিত মন দিক সৃজনশীল লেখালেখিতে। অবশ্য ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকি আর টুডি অ্যানিমেশন উপভোগ করতেন নাশিত। তাই ২০০০ সালে হিলিয়ার্ড ডেভিডসন হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স আর ইংরেজি বিষয়ে পড়লেও থ্রিডি অ্যানিমেশনের মাধ্যমে নিজের কল্পনাশক্তিকে প্রকাশ করতে বিষয় হিসেবে বেছে নেন চিত্রকলা, ফটোগ্রাফি, অ্যানিমেশন ও কম্পিউটার গ্রাফিকস। থিসিস করেন 'অ্যা স্কেচ-বেজড ইন্টারফেস ফর প্যারামেট্রিক ক্যারেকটার মডেলিং' বিষয়ে। ওয়াকম ট্যাবলেট দিয়ে একটি মায়ান চেহারার স্কেচকে সফলভাবে থ্রিডিতে পরিবর্তন করেও দেখিয়ে দেন তিনি। ২০০৪ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সনি মোশন পিকচার্স ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিন মাস ইন্টার্নি করেন। এর পর যোগ দেন ওয়াল্ট ডিজনি অ্যানিমেশন স্টুডিওতে। লাইটিং আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেন অস্কার পাওয়া সিনেমা 'ফ্রোজেন'-এ। আলো-ছায়ার খেলা দেখিয়ে সিনেমার চরিত্রদের গতি আর স্থিরতায় মুন্সিয়ানা দেখিয়ে অর্জন করেন অস্কার।
ড. হা সা ন শ হী দ
বিদায়ী বছরের আগস্টে বিশ্বের প্রথম সোলার হেলিকপ্টার তৈরি করে বিশ্বে আলোড়ন তুলেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী ড. হাসান শহীদ। বর্তমানে তিনি কুইনমেরি ইউনিভাসির্টি অব লন্ডনের স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ার-এর ম্যাথ অ্যান্ড সাইন্সের সহকারী অধ্যাপক। সুইজারল্যান্ডের সোলার ইমপালস এবং নাসার সান সিকার, পাথফাইন্ডার ও হেলিওসসহ সোলার প্যানেলের অনেক প্রজেক্ট থাকলেও বাংলাদেশি ডক্টর হাসানের হাত ধরেই আকাশে ডানা মেলে বিশ্বের প্রথম সোলার হেলিকপ্টার। তার তত্ত্বাবধানে কুইনমেরি ইউনিভাসির্টি অব লন্ডনের মাস্টার্স অধ্যায়নরত ৭ শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে উদ্ভাবিত সোলার হেলিকপ্টারটি শুধু সৌরশক্তি দিয়ে চলে। এই উদ্ভাবনী দলে রয়েছেন আরেক ব্রিটিশ বাংলাদেশি শাকির আহমেদ। বিশ্বে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সোলার প্যানেল ব্যবহূত হলেও সোলার হেলিকপ্টারটির উদ্ভাবন তৈরি করেছে নতুন ইতিহাস। আর জগদীশ চন্দ্র বসু এবং সত্যেন বোসের মতো বিজ্ঞানীর উত্তরসূরি হিসেবে ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন দুই বাংলাদেশি। ড. হাসান শহীদের জন্ম বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার হানুয়া গ্রামে। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করে পাড়ি দেন যুক্তরাজ্যে। লন্ডনের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। এরপর লন্ডনের কুইনমেরি ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন।
পোস্ট সম্পর্কিত সমস্যার জন্য মন্তব্য দিন।ডাউনলোড লিঙ্ক এ সমস্যা জন্য ইনবক্স করুন Aimzworld007
ConversionConversion EmoticonEmoticon